প্রতিটি মানুষ সচ্ছল ও জীবিকার ব্যাপারে ভাবনামুক্ত হতে চায়। আল্লাহতায়ালা মুমিনের প্রাত্যহিক জীবনাচারেরই কিছু কর্মকাণ্ডের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। সেগুলোর সুষ্ঠু অনুসরণের ফলে জীবিকা উপার্জনে সচ্ছলতা ও বরকত লাভ সম্ভব।
সব বরকতহীন কাজে বরকত লাভের উপায় বলে দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এমনকি অযথ সময় ব্যয় করার ফলে আয়-রোজগার ও সময়েও বরকত পায় না মানুষ। এ নিয়ে মানুষের মাঝে হা-হুতাশের শেষ নেই।
জীবন ও সম্পদে তথা আয়-রোজগারে বরকত লাভে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়ে গেছেন অসংখ্য উপদেশ ও দিকনির্দেশনা। তিনি বলেছেন, বিশুদ্ধ নিয়তে যথাযথ কাজ। তা হোক কম-বেশি। আর তাতে দুনিয়া কিংবা পরকালে সমস্যার সমাধান পাবে মুমিন। অল্প বিশুদ্ধ কাজগুলো মুক্তি কিংবা সমাধানে যথেষ্ট। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ছোট্ট আমলটি সব কাজে বরকত লাভে যথেষ্ট কার্যকরী। তাহলো হলো-
> প্রতিটি কাজের শুরুতে বলা-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’
অর্থ : পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
একবার এক সাহাবি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুযোগের স্বরে বললেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা খাবার খাই, কিন্তু পেট ভরে না। খাবারে তৃপ্ত হতে পারি না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘সম্ভবত তোমরা আলাদা আলাদা খাও; তাই না?
ওই সাহাবা বললেন, ‘জি হ্যাঁ’; ঠিক তাই! তিনি বললেন-
– ‘এক সঙ্গে খাবার খেতে বসবে।’
– আল্লাহর নাম নিয়ে (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم বলে) শুরু করবে।’
তবে আল্লাহ তাআলা বরকত দেবেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।
ছোট ছোট নড়াচড়া, ঐক্য, সামান্য মেহনতের সব কথা ও কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ’র আমল করলে বড় বড় সাফল্য অর্জিত হয়। আল্লাহর স্মরণে যেন হয় মুমিন মুসলমানের প্রতিটি কাজ। আল্লাহর স্মরণে মাধ্যমে প্রতিটি কাজ শুরু হলে তাতে মিলবে বরকত। অথচ মানুষ ছোট্ট ও সহজ এ আমলটি থেকেই হর-হামেশা বিরত থাকে।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এ আমল করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম এ আমলের হুবহু বাস্তবায়ন করে গেছেন। যার বরকত তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পেয়েছেন। এখনও যারা এ আমল জারি রেখেছেন; তারাও বিসমিল্লাহ’র বরকত থেকে বঞ্চিত হন না। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা উঠে এসেছে-
– রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে খাদ্যে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাদ্যে শয়তানের অংশ থাকে।’ (মুসলিম)
– রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে খাবারের মজলিসে এক সাহাবি ‘বিসমিল্লাহ’ ব্যতিত খাওয়া শুরু করে। পরে যখন স্মরণ হয় তখন বলেন- ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালিহি ও আখিরিহি` তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ অবস্থা দেখে হাসতে লাগলেন এবং বললেন, ‘শয়তান যা কিছু খেয়েছিল তিনি (সাহাবি) বিসমিল্লাহ পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে সব বমি করে দিয়েছে।’ (আবু দাউদ)
– হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেন, বিসমিল্লাহ যখন নাজিল হয়, তখন মেঘমালা পূর্ব দিকে দৌড়াতে লাগল, সাগরগুলো উত্তাল অবস্থায় ছিল, সব প্রাণীজগত নিস্তব্ধভাবে দাঁড়িয়ে শুনতে ছিল, শয়তানকে দূরে বিতাড়িত করা হয়েছিল এবং আল্লাহ তাআলা নিজ ইজ্জত ও জালালিয়াতের কসম খেয়ে বলেছেন, যে জিনিসের ওপর বিসমিল্লাহ পড়া হবে, ঐ জিনেসে অবশ্যই বরকত দান করব। (তাফসিরে মারদুওয়াই)
– হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিপক্ষে শত্রু যুদ্ধের ময়দানে অপেক্ষা করছিল। হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদের ধর্মে সত্যতা পরীক্ষার জন্য বিষে ভরা একটি শিশি তাঁকে দেয়া হলো। তিনি শিশির সম্পূর্ণ বিষ বিসমিল্লাহ পড়ে পান করেছেন। কিন্তু বিসমিল্লাহ`র বরকতে বিষের বিন্দুমাত্র প্রভাবও তার ওপর পড়েনি। (তাফসিরে কাবির)
– হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি পায়খানায় (টয়লেটে) প্রবেশকালে বিসমিল্লাহ পড়ে, তবে জিন ও শয়তানদের দৃষ্টি ওই ব্যক্তির গুপ্তাঙ্গ পর্যন্ত পৌছতে পারে না।’ (তিরমিজি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব কাজে বরকত লাভে শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া। তবে লোক দেখানো, কু-ধারনা, কল্পনা ও অবিশ্বাস থেকে বিরত হয়ে খালেছ নিয়ত, সুদৃঢ় বিশ্বাস, আল্লাহর সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক এবং পরিপূর্ণ ঈমান রাখার নিয়তে সব কাজে বিসমিল্লাহ পড়া জরুরি। তবেই সব কাজে বরকত লাভ করবে মুমিন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ছোট্ট আমলের মাধ্যমে সব কাজে বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দিন।