মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:-
شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ اللَّـهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ
তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।
(সূরা শূরা: ১৩)
পরবর্তীতে আল্লাহ বলেন-
সুতরাং আপনি এর প্রতিই দাওয়াত দিন এবং হুকুম অনুযায়ী অবিচল থাকুন; আপনি তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করবেন না। বলুন, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমি তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা ও তোমাদের পালনকর্তা। আমাদের জন্যে আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কর্ম। আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে বিবাদ নেই। আল্লাহ আমাদেরকে সমবেত করবেন এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তণ হবে। (সূরা শূরা: ১৫)
সুতরাং ঈমানের দাবী অনুযায়ী আমাদের উপর ফরয হচ্ছে আল্লাহ্’র জমীনে আল্লাহ্’র সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব তথা দ্বীন-ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ্’র নির্দেশিত এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রদর্শিত পদ্ধতিতে মানবজাতিকে আহ্বান করা।
আজকের আলোচনার বিষয়, দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়সমূহ। এই অন্তরায়কে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। সামষ্টিক অন্তরায় তথা সাংগঠিক বাঁধা এবং ব্যক্তিগত অন্তরায় বা ব্যক্তি পর্যায়ের বাঁধা।
সাংগঠনিক অন্তরায়:-
(১) অজ্ঞ, অযোগ্য, অদক্ষ, অত্যাচারী শাসকশ্রেণী: মুসলমানদের ঘাড়ে আজ সওয়ার হয়ে আছে অজ্ঞ, অযোগ্য, অদক্ষ, অত্যাচারী শাসক, মুসলিম নামধারী কিন্তু তারা পরিচালিত হচ্ছে মানবরচিত আইনে আর আমাদের পরিচালনা করছে তাগুতের পথে। যদিও তাদের উপরই প্রধানত দায়িত্ব ছিল দ্বীন প্রতিষ্ঠার ঈমানী দায়িত্ব। অথচ তারা শুধু দুনিয়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আল্লাহর আইন অমান্য করে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুদ, মদ, জুয়া-লটারী, পতিতাবৃত্তি, সিনেমা, অবৈধ টিভি চ্যানেল, অশ্লীল ছবি, নাচ-গান, সৌধ/মিনার/মূর্তি পূজা এবং অশ্লীলতা প্রতিষ্ঠা করে চলছে।
তারা মানবরচিত বিধান/মতবাদ/তন্ত্র দিয়ে দেশ চালাচ্ছে আর ক্ষমতার জন্য ব্যক্তি আদর্শ ও মানব-বিধানের সংগঠন পরিচালনা করে মুসলমানদের মাঝে দলাদলি-বিভক্তি সৃষ্টি করে জাহেলিয়াত কায়েম করছে। এই শাসকদল ও মানবরচিত মতবাদের রাজনীতিই মুসলমানদের জন্য দ্বীন কায়েমের প্রধান অন্তরায়।
আল্লাহ বলেন-
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী। (সূরা নিসা: ৫৮)
এতে বিশেষ করে শাসকদেরকে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখার এবং সুবিচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি হাদীসে এসেছে যে, ‘‘বিচারক যতক্ষণ পর্যন্ত যুলুম করে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তার সাথে থাকেন। অতঃপর সে যখন যুলুম শুরু করে দেয়, তখন আল্লাহ তাকে তার নিজের উপর ছেড়ে দেন।’’ (ইবনে মাজা) (সূত্র: তাফসীরে আহসানুল বয়ান, আরো দেখুন: তাফসীরে ইবনে কাসীর)
‘আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই।’’ (মুসলিম ১৮৪০নং)
(২) বিভিন্ন দল ও ফিরকা: দ্বীন প্রতিষ্ঠায় দ্বিতীয় প্রধান অন্তরায় হচ্ছে মুসলমানদের মাঝে দলাদলি, অনৈক্য আর বিভক্তি। দ্বীন প্রতিষ্ঠার নামে কিংবা দাওয়াত-তাবলীগের নামে দেশে এখন অনেক সংগঠন। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার একতা, বিভেদ নয়। তাই সহীহ আক্বীদা ও সুন্নাহ ভিত্তিক সকল দলকেই একই কাতারে আসতে হবে। (সূরা আনআম: ১৫৯, সূরা আলে ইমরান: ১০৩-১০৪) আয়াত সমূহের তাফসীর দ্রষ্টব্য।
(৩) ভ্রান্ত ও অপূর্নাঙ্গ পদ্ধতিতে দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগ:রাসূলের সুন্নাহ -পদ্ধতির পরিবর্তে নিজের তৈরি ভ্রান্ত-অপূর্নাঙ্গ পদ্ধতিতে দ্বীনের দাওয়াত ও এই পথকেই সঠিক এবং দ্বীনের পথে চলার জন্য যথেষ্ট মনে করা। এই ধরণের সংগঠনের কারণে মুসলমানদেরকে দ্বীনের সঠিক দাওয়াত দেয়া কঠিন হয়ে যায়। কেননা তারা তখন আসল দ্বীনকে কঠিন মনে করে। তারা চায়- কিছু ইবাদত করবে সুন্নাহ ও ব্যক্তিমর্জিতে আর দুনিয়ায় চলবে নিজের মতবাদ দিয়ে।
এই ধরণের সংগঠন কুরআন ও হাদীসের সকল জিহাদ-কিতাল, বায়আতের বিষয়কে দাওয়াতের ফযিলাত হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরে আর ব্যক্তিগত আমালকেই দ্বীন মনে করে। বস্তুত তারা বড়ই অজ্ঞ।। ( দেখুন সূরা আলে ইমরান: ১০৪, সূরা তাওবা: ১১১ এর তাফসীর।)
ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার পূর্বে আল্লাহ যে কোনো নবীকে যে কোনো উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু) সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর সুন্নতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পরে এমন অপদার্থ লোক সৃষ্টি হল যে, তারা যা বলত, তা করত না এবং তারা তা করত, যার আদেশ তাদেরকে দেওয়া হত না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন। আর এর পর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।’’ (সহীহ মুসলিম:৫০)
(৪) খানকাহ ও দরবার শরীফ: দেশে প্রচলিত, ছাতার ব্যঙের মতো গজিয়ে ওঠা তাছাওফ বা সূফিবাদের নামে ভন্ড মতবাদ ও তরীকার নামে ভ্রান্ত পদ্ধতির দ্বীন, ইসলামের নামে এসব খানকাহ/দরবার শরীফ মূলত; পীর পূজারী, কবর পূজারী, শিরক ও বিদআতের আখড়া। এইসব আখড়াতে যারা যায়, যারা তাদের ফাঁদে পড়ে (দুনিয়ার বিপদ, মুসিবত, রোগ-বালাই থেকে তদবীর আনতে গিয়ে) তাদের বিশ্বাস করে, তাদের সাথে মিশে, তাদের খাবার গ্রহণ করে তখন তাদেরকে সঠিক পথে ফিরানো খুবই দূরহ। সাধারণ মানুষ (অজ্ঞ ও দুনিয়াদারী বিদ্বান)এইসব ভন্ডদের প্রকাশমান কিছু ভালো দেখে খুবই মোহিত হয়। তাদের মগজ একেবারেই ধোলাই করে দেয়া হয়, যে কারণে মুসলমানদের মাঝে কুরআন ও হাদীস থাকা সত্ত্বেও তারা বিভ্রান্তিতে পড়ছে।
(৫) চরমপন্থী বা সন্ত্রাসবাদ: বর্তমানে যারা জঙ্গী হিসেবে খ্যাত, যারা কুরআনের অপব্যখ্যা করে, হাদীসের অপব্যখ্যা করে সরলমনা মুসলমানদের ধোকা দিয়ে সমাজ, রাষ্ট্রে ফিতনা সৃষ্টি করছে। তারা মুসলমান হত্যা করে দ্বীন কায়েম করতে চায়। তারা মূলত আলী (রা)এর আমলের খারেজী তথা ধর্মত্যাগীর অনুসারী।
ব্যক্তগত অন্তরায়:-
(১)আলেমদের অনৈক্য ও দুনিয়ামুখিতা: যারা আল্লাহভীরু ও সঠিক দ্বীন বুঝতে চায় তাদের জন্য প্রধান অন্তরায় হচ্ছে, আলেমদের মাঝে অনৈক্য ও তাদের দুনিয়ামূখিতা। তারা দুনিয়ার স্বার্থেদ্বীনের হক কথা বলে না, অত্যাচারির সামনে প্রতিবাদ জানায় না।
আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেম (Scholar) ব্যক্তিবর্গ ইসলামকে শান্তির ধর্ম, কল্যাণের ধর্ম, Complete Code of Life প্রভৃতি বিশেষণে বক্তৃতা, বিবৃতিতে উপস্থাপন করে থাকলেও তা প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তব কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। তাই এ দেশে আল্লাহ্’র একক সার্বভৌমত্ব এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার পেছনে এই সকল পন্ডিতদের আচরণ অনেকাংশেই দায়ী।
আবূ আব্দুল্লাহ ত্বারেক ইবনু শিহাব বাজালী আহমাসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল এমতাবস্থায় যে, তিনি (সওয়ারীর উপর আরোহণ করার জন্য) পাদানে পা রেখে দিয়েছিলেন, ‘কোন্ জিহাদ সর্বশ্রেষ্ঠ?’ তিনি বললেন, ‘‘অত্যাচারী বাদশাহর সামনে হক কথা বলা। (রিয়াদুস সালেহীন: হা-২০০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন বানী ইসরাঈল গর্হিত কর্মে লিপ্ত হলো, তাদেরকে তাদের আলিমগণ তা হতে বিরত থাকতে বলল, কিন্তু তারা তা করল না। তাদের সাথে আলিমগণ উঠা-বসা ও পানাহার চালিয়ে যেতে থাকল। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের পরস্পরের হৃদয়কে একত্রিত করে দিলেন (ফলে আলিমরাও অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ল)। আল্লাহ তা‘আলা দাউদ ও ঈসা ইবনু মারইয়ামের মুখ দিয়ে তাদেরকে অভিশাপ দিলেন। কেননা, তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং অত্যন্ত বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঠেস দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বলেলনঃ কখনও নয়, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! তাদেরকে তোমরা (অত্যাচারীদেরকে) হাত ধরে টেনে এনে হক্ব ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত ছেড়ে দিবে না। (দেখুন- রিয়াদুস সালেহীন, হা-২০১, পরিচ্ছেদ-২২)
উম্মুল মু’মেনীন উম্মে সালামাহ হিন্দ্ বিন্তে আবী উমাইয়া হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের উপর এমন শাসকবৃন্দ নিযুক্ত করা হবে, যাদের (কিছু কাজ) তোমরা ভালো দেখবে এবং (কিছু কাজ) গর্হিত। সুতরাং যে ব্যক্তি (তাদের গর্হিত কাজকে) ঘৃণা করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে এবং যে আপত্তি ও প্রতিবাদ জানাবে, সেও পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি (তাতে) সম্মত হবে এবং তাদের অনুসরণ করবে (সে ধ্বংস হয়ে যাবে)।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না?’ তিনি বললেন, ‘‘না; যে পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করবে।’’ (মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ; রিয়াদুস সালেহীন: ১৯৩)
আবূ যায়দ উসামাহ ইবনু যায়দ ইবনু হারেসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’’ (বুখারী, মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন: ২০৩)https://c0.pubmine.com/sf/0.0.3/html/safeframe.htmlREPORT THIS AD
(২) পূর্ব পুরুষ ও অধিকাংশের দোহাই: মুসলমানদের মাঝে বর্তমানে এই প্রবণতাই দ্বীনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত আর অপরকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। আল্লাহ বলেন-
“তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরন কর তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে, তারা কেবল আন্দাজ-অনুমানের অনুসরন করে চলে; তারা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই করে না” [সূরা আনআম : ১১৬]
( দেখুন: সূরা ইউসুফ: ৬৮/১০৬, সূরা মায়িদা: ১০৩, সূরা আরাফ: ১৩১ ইত্যাদি আয়াতের তাফসীর।)
(৩) দুনিয়ামূখী: মুসলমানরা বর্তমানে নামায, রোযা-ঈদ আর বাত্সরিক হাজ্জ করাটাই দ্বীন মনে করছে আর দুনিয়ামূখি হয়ে আল্লাহর বিধান লঙঘন করে অর্থ কামানোটাই জীবনের সেরা সাফল্য মনে করছে।
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় দুনিয়া মধুর ও সবুজ (সুন্দর আকর্ষণীয়)। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এর প্রতিনিধি নিয়োজিত করে দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করছ? অতএব তোমরা (যদি সফলকাম হতে চাও তাহলে) দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ এবং নারীর (ফিৎনা থেকে) বাঁচ। কারণ, বানী ঈস্রাইলের সর্বপ্রথম ফিৎনা নারীকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।’’ (রিয়াদুস সালেহীন: ৭১)
(৪) বিদআত ও শিরকের প্রতি মোহ: দেশে প্রচলিত বিদআত ও শিরকের প্রতি মাত্রারিক্ত আসক্তি।
(৫) বান্দাহর হক তথা মুসলমানদের পারস্পরিক জান-মাল-সম্মানের যথাযথ হক আদায় না করা।
(৬)সমাজে প্রচলিত জাল হাদীস আর বানোয়াট কিসসা-কাহিনি।
আল্লাহ আমাদের এইসব ফিতনা থেকে হেফাজত করুন আর দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক। আমীন।।