আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই নবী (সা.) দোয়ায় বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়েত, আল্লাহভীতি, পবিত্রতা ও অমুখাপেক্ষী জীবন চাই।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭২১)
আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) মুমিন জীবনের চার পাথেয়র ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং আল্লাহর কাছে তা প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন। হাদিস বিশারদদের মতে, এ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন চারটি বিষয় বর্ণনা করেছেন, যা মুমিনের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।
দোয়া কেন ও কিভাবে করব?
দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়াকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং না চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। বিপদগ্রস্ত দোয়া করলে আল্লাহ তাকে উদ্ধার করেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তিনি আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাকে ডাকে এবং বিপদ দূরীভূত করেন।’ (সুরা নামল, আয়াত : ৬২)
দোয়া করতে হয় একান্তে ও বিনয়ী হয়ে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো; তিনি অবিচারকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৫)
চার প্রার্থনার উদ্দেশ্য
আল্লামা আবদুর রহমান বিন নাসির (রহ.) বলেন, ‘এটি একটি ব্যাপক ও কল্যাণকর দোয়া। কেননা তাতে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ চাওয়া হয়েছে। হেদায়েত হলো উপকারী জ্ঞান, আল্লাহভীতি হলো ভালো কাজ করা ও পাপ পরিহার করা, পবিত্রতা হলো পার্থিব সম্পর্ক থেকে অন্তরকে মুক্ত করা, অমুখাপেক্ষিতা হলো সব কিছু ছেড়ে আল্লাহমুখী হওয়া।’ (বাহজাতু কুলুবিল আবরার, পৃষ্ঠা ২৪৯)
চার প্রার্থনার গুরুত্ব
কোরআন ও সুন্নাহের আলোকে হাদিসে বর্ণিত চারটি বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো—
১. হিদায়াত : হিদায়াত মানে দ্বিন-ইসলামের পথে চলা। কোরআনে হিদায়াতের অনুসারীদের অভয় দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমি বললাম, তোমরা সবাই এই স্থান থেকে নেমে যাও। পরে যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সৎপথের কোনো নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নাই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৮)
২. আল্লাহভীতি : আল্লাহভীতি মানে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে পাপ পরিহার করা এবং পুরস্কার লাভের আশায় তাঁর আদেশ মান্য করা। আল্লাহভীতি মুমিনের ইহকালীন জীবনে শৃঙ্খলা ও সম্মান বয়ে আনে, সমুদয় সংকট থেকে রক্ষা করে এবং পরকালে পুরস্কারের যোগ্য করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৪)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানী যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১৩)
৩. পবিত্রতা : হাদিসে ব্যবহৃত ‘আফাফ’ শব্দটি মানুষের আত্মিক ও চারিত্রিক পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা বোঝায়। সুতরাং মুমিন সব অবৈধ বিষয়, আল্লাহর অবাধ্যতা, চারিত্রিক স্খলন ও আত্মিক ত্রুটি, পার্থিব জীবনের মোহ ত্যাগ করে আল্লাহমুখী হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আজ সম্পদ ও সন্তান কোনো উপকার করতে পারবে না, কেবল যে পরিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন উত্তম চরিত্রের চেয়ে অন্য কিছু পাল্লায় বেশি ভারী হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৩)
৪. অমুখাপেক্ষী জীবন : হাদিসে ব্যবহৃত ‘গিনা’ শব্দ আনা হয়েছে। এর অর্থ এমন অমুখাপেক্ষী ও সচ্ছল জীবন, যেখানে দারিদ্র্য ও অসচ্ছলতা ইবাদতের পথে প্রতিবন্ধক হয় না। আল্লাহ সচ্ছল ও স্বাবলম্বী মুমিনদের পছন্দ করেন। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আল্লাহভীরু, স্বাবলম্বী ও গোপনে ইবাদতকারী বান্দাকে ভালোবাসেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৬৫)