নগরীর লালদীঘি ময়দানে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত দু’দিন-ব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলনে গতকাল (শুক্রবার) প্রথম দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতের আমির দারুল উলুম হাটহাজারীর মুহতামিম শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন, নাস্তিক-মুরতাদ ও খোদাদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে নবীপ্রেমিক তৌহিদি জনতা আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাবে।
বর্তমান জমানায় ইসলাম ও মুসলমান পরিচয় দিয়ে বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঈমান-আক্বিদা বিনষ্ট করার বহুমুখী চক্রান্ত চলছে। ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোরআন ও সুন্নাহ’র বিরুদ্ধে কটূক্তি করা হচ্ছে।
সাস্কৃতিক আগ্রাসন দ্বারা আমাদের সন্তান-সন্তুতিদের চরিত্র নষ্ট করা হচ্ছে। দুর্নীতি-সুদ-ঘুষ-ব্যাভিচার সমাজে মহামারী আকার ধারণ করেছে। মানুষের জীবন থেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এবং খোদাভীতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এহেন নাজুক মূহূর্তে মানুষের অন্তরে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.)-এর মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
আহমদ শফী বলেন, সিরাতুল মুস্তাকীমের পথ ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) আনুগত্যের মাধ্যমে তাগুতি ও কুফরী শক্তির মোকাবেলা করতে হবে। শিরক-বিদাআত মুসলমানদের ঈমান-আমলকে ধ্বংস করছে। সমাজ থেকে সকল অনাচার-পাপাচার দূরীভূত করে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন আদর্শিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে খোদাভীরু নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে। হেফাজতে ইসলাম সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। নাস্তিক-মুরতাদ ও খোদাদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে নবীপ্রেমিক তৌহিদি জনতা আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাবে।
আল্লামা আহমদ শফী আরও বলেন, জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাকওয়া ও খোদাভীতি অনুসরণ করলে সমাজের নৈরাজ্য, অশান্তি, দুর্নীতি ও হানাহানির লেশমাত্র থাকতো না। তিনি বলেন, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ পরিপূর্ণ অনুসরণ করে আদর্শ সমাজ গড়া হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্য। তিনি সকলের উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রাত্যহিক জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাশাপাশি সুন্নাতে রাসুলের ইত্তেবা করবেন। বেশি বেশি করে প্রিয়নবী সা. এর প্রতি দরুদ পাঠ করবেন। গীবত, শেকায়েত, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা থেকে নিজে বিরত থাকবেন, পরিবার-পরিজনকে বিরত রাখবেন। মানুষের হক নষ্ট করবেন না; কারও ইজ্জতের ওপর আঘাত করবেন না।
শানে রেসালত সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলিম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দ রাসূলের পবিত্র জীবনাদর্শ, রাসূলের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় উম্মতে মুহাম্মদীর করণীয় এবং ইসলাম ও মহানবীর প্রতি কটাক্ষকারীদের পরিণতি সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বক্তব্য পেশ করেন। বাদ যোহর থেকে শুরু হওয়া শানে রেসালত সম্মেলন রাত ১২ পর্যন্ত চলে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে তৌহিদী জনতা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে।
চার অধিবেশনে বিভক্ত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা হোসাইন আহমদ কৈয়গ্রাম, মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম (পীর সাহেব ফিরোজশাহ), মাওলানা মোহাম্মদ শফী রাথুয়া। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, প্রফেসর ড. মাওলানা হাফেজ হিজবুল্লাহ, মাওলানা মুফতি কিফায়তুল্লাহ, মুফতি আহম্মদ উল্লা পটিয়া, মাওলানা মুফতি আবদুল হামিদ কুষ্টিয়া, মাওলানা ইয়াকুব ওসমানী, মাওলানা ইসমাঈল খান, মাওলানা আনিসুর রহমান, মাওলানা মাহবুবুর রহমান হানিফ, মাওলানা জুনাইদ বিন জালাল।
হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ইয়াহুদি-খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর এদেশীয় এজেন্টরা শান্তিপ্রিয় আলেমসমাজ, ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং কুরআন-হাদিসের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র কওমি মাদরাসাসমূহ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা, জঙ্গি তৎপরতার বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণ করা এবং ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে অব্যাহতভাবে নিয়োজিত রয়েছে। তারা দেশ ও জাতির বন্ধু হতে পারে না।
মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের জিহাদ চলবে। যতদিন বাংলাদেশ নবীপ্রেমিক জনতার বুকে এক ফোঁটা রক্তও থাকবে নবীর সঙ্গে যারা বেয়াদবি করে, ওলামায়ে কেরামের প্রতি বিদ্রুপ করবে ও মসজিদ মাদরাসার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না।