যদিও লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিবছর কাবা ঘর ঘুরে দেখেন, তবুও খুব কম মানুষই এমন আছেন যারা এর অভ্যন্তরীণ বিস্ময়কর রহস্য সম্পর্কে অবগত আছেন।
১) কাবার চারিদিকে মার্বেল পাথর দিয়ে ঘিরে দেওয়ার উদ্দেশ্য
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের(রাযিঃ) মক্কার শাসনকালে কাবার চারিদিকে মার্বেল পাথর দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলেন। এটি বর্ষাকালে কাবা ঘরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং কাবার গিলাফকে সুরক্ষিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। আরও বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মার্বেল পাথর দিয়ে ঘেরা অংশের উপর পঞ্চান্নটি তামার রিং ব্যবহার করা হয়েছিল।
২) হাজরে আসওয়াদ কোনো সাধারণ পাথর নয়
হাদিসের গ্রন্থগুলিতে হাজরে আসওয়াদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রচুর আলোচনা এসেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হাজরে আসওয়াদ একটি জান্নাতি পাথর, তার রং দুধের চেয়ে বেশি সাদা ছিল। এরপর বনি আদমের পাপরাশি এটিকে কালো বানিয়ে দিয়েছে।” (তিরমিজি,মুসনাদে আহমাদ)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, “হাজরে আসওয়াদ জান্নাতেরই একটি অংশ।” (ইবনে খুজায়মা)
৩) মুলতাজিমের ফজিলত
গাল, বুক এবং হাত কাবা ঘরের দেয়ালের বিপরীতে ধরে রাখা সুন্নত। বর্ণিত আছে যে, ইবনে উমর(রাযিঃ) একবার তাওয়াফ সম্পন্ন করে, সালাত আদায় করে, তারপর হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেছিলেন। এরপরে, তিনি হাজরে আসওয়াদ এবং কাবার দরজার মাঝে এমনভাবে দাঁড়িয়েছিলেন যে, তাঁর গাল, বুক এবং হাত কাবার দেয়ালের বিপরীতে ছিল। অতঃপর তিনি বলেছিলেন, “আমি রাসুলুল্লাহকে সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি।”
৪) কাবার অভ্যন্তরে একটি স্থান রয়েছে যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছিলেন
কাবার অভ্যন্তরের প্রবেশদ্বারে বিপরীত দিকে একটি জায়গা রয়েছে যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছিলেন। এই অঞ্চলটি কিছু ভিন্ন বর্ণের মার্বেল দ্বারা নির্দেশিত।
৫) তিনটি কাঠের স্তম্ভ কাবার ছাদকে ধারণ করে আছে
পূর্বে কাবার ছাদকে ধারণ করতে ছয়টি কাঠের স্তম্ভ ব্যবহৃত হত, কিন্তু এখন কেবল মাত্র তিনটি ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি ৪৪ সেন্টিমিটার ব্যাসের এবং ৯ মিটার উঁচু। তামা ও রূপা দিয়ে তৈরি ল্যাম্পগুলি ছাদের সাথে ঝুলতে থাকে।
৬) কাবার অভ্যন্তরের সিঁড়ি
কাবার অভ্যন্তরে ডান পাশে একটি সোনার দরজা আছে। এই দরজার নাম ‘বাবুত তাওবা’। কাবার ছাদে ওঠার জন্য এটি দিয়ে কাবার সিঁড়ির দিকে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
৭) রুকনে ইয়ামানির ফজিলত
ইবনে ওমর রাযিঃ বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “নিশ্চয় এই দু’টি রুকন (হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানি) স্পর্শ করলে পাপসমূহ ঝরে যায়।” (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে এ দু’আ পড়তেন- “হে আমাদের রব, আপনি আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা করুন।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)
৮) কাবা ঘরের চাবি রক্ষক
মক্কা বিজয়ের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাবার চাবি দেওয়া হয়েছিল এবং তা তিনি নিজের দখলে রাখার পরিবর্তে বনী শাইবা গোত্রের উসমান ইবনে তালহাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
তারা বহু শতাব্দী ধরে কাবার চিরাচরিত মূল রক্ষক ছিলেন এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেছিলেন, “হে বনী তালহা, কিয়ামত অবধি এই চাবি গ্রহণ কর। অন্যায় ও অত্যাচারী না হলে তোমাদের কাছ থেকে কেউ এটি ছিনিয়ে নেবে না।”
এবং আজ অবধি, কাবার চাবিগুলি এই পরিবারের হাতেই রয়েছে।
৯) কাবার গিলাফের ইতিহাস
ইসলামী যুগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি সাল্লাম প্রথম ইয়েমেনী কাপড়ের গিলাফ চড়ান। এরপর আবু বকর (রাযিঃ), উমর (রাযিঃ), এবং উসমান (রাযিঃ) “কিবতী” কাপড়ের গিলাফ চড়ান। একথা প্রমাণিত আছে যে, মুআবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান(রাযিঃ) বছরে দু’বার কাবায় গিলাফ চড়াতেন। আশুরার দিনে রেশমের এবং রমজানের শেষে কিবতী কাপড়ের গিলাফ চড়াতেন।
১০) কাবার গিলাফ মক্কায় নির্মিত হয়
পবিত্র নগরী মক্কার একটি শিল্প কারখানায় নিম্নোক্ত হিসাবে কাবার গিলাফ নির্মিত হয়ঃ
– নতুন গিলাফ তৈরি করতে ১২০ কেজি সোনার সুতা, ৭০০ কেজি রেশম সুতা ও ২৫ কেজি রুপার সুতা লাগে।
– গিলাফটির দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪ মিটার।
– গিলাফের সেলাই কাজে অংশগ্রহণ করে দেড় শতাধিক অভিজ্ঞ দর্জি।
– গিলাফ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ মেশিন।