কায়িদাতুল জিহাদ – কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
যদি অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে, তবে আমরাও আমাদের শাস্তির পুনরাবৃত্তি করতে থাকবো!
সমস্ত প্রশংসা সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য, যিনি এই দ্বীনকে অন্য সকল ধর্মের উপর বিজয় দান করেছেন, তাঁর রাসূলকে সাহায্য করেছেন এবং তাঁর একান্ত অনুগত বান্দাদের সম্মানিত করেছেন।
আমাদের উপর এটা আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদের জন্য আমাদের মধ্য থেকেই একজন নবী প্রেরণ করেছেন। এই নেয়ামতের জন্য আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের নবী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সর্বাধিক পছন্দের নবী এবং তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমিনদের প্রতি অতিশয় দয়াশীল।
সালাম ও দরূদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ, তাঁর সাহাবিগণ এবং তাদের উপর, যারা কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর রাসূলের দেখানো সরল পথ অনুসরণ করেন এবং তার অনুসরণে জিহাদের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে নোংরা ম্যাক্রনের করা জঘন্য বক্তব্যগুলোর কারণে সমগ্র মুসলিম উম্মাহের মধ্যে যে অস্থিরতা ও প্রতিবাদ দেখা গেছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মুসলিম উম্মাহর এই প্রতিক্রিয়া আমাদের কাছে পাথরের নিচে লুকিয়ে থাকা তীব্র পানির স্রোত বা ছাইচাপা আগুনের মতই মনে হয়েছে। এই স্রোত বা আগুনের তীব্রতা উপর থেকে বুঝা যায় না, কেবলমাত্র যখন তা প্রকাশিত হয় তখনি এর তীব্রতা সকলের কাছে স্পষ্ট হয়। এই উম্মাহের মধ্যে আরও এমন অনেক কল্যাণকর বিষয় রয়েছে, যা উপযুক্ত সময়ে প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মাহকে নিয়ে যা বলেছেন তা কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত সকলের জন্য সত্য। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন –
“ مَثَلُ أُمَّتِي مَثَلُ الْمَطَرِ لاَ يُدْرَى أَوَّلُهُ خَيْرٌ أَمْ آخِرُهُ “
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আমার উম্মাত সেই বৃষ্টির মতো যার প্রথম ভাগ না শেষ ভাগ বেশী ভালো তা জানা যায় না”। মিশকাত (৬২৭৭), সহীহাহ (২২৮৬)
হে মুসলিম উম্মাহ,
আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে কটূক্তি করা – পশ্চিমা ক্রুসেডারদের চরিত্রের অংশ। ইতিহাস সাক্ষী এই কাজ তারা বার বার করেছে। এই বিষয়টি পশ্চিমাতে কিছুদিন পর পরই উঠে আসে। নোংরা ম্যাক্রনের নেতৃত্বে আবারও আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে কটূক্তি করা – পশ্চিমাদের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু নয়।
অন্যদিকে এই ঘটনা মুমিনদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাঁদের ভালবাসার পরীক্ষা। এটা আল্লাহর রাসূলের প্রতি মুমিনদের আনুগত্য কোন পর্যায়ের – তার পরীক্ষা। নবীকুল শিরোমণি রাসূলুল্লাহর সম্মান রক্ষার্থে মুমিনরা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, মুমিনরা তাদের অন্তরে ইসলাম ও আল্লাহর রাসূলের জন্য কি পরিমাণ ভালোবাসা ধারণ করে সেটা এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দ্বারা প্রকাশ পায়।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি সমগ্র পৃথিবীবাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, ক্রুসেডারদের নোংরা কৌশলের দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের দৃঢ়তা ভেঙ্গে যাবার নয়। সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ এটা আবারও প্রমাণ করেছে যে, মুসলিম জাতি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী এবং চাইলেই তাদেরকে ভেঙ্গে ফেলা যাবে না। গুপ্তহত্যা, উলামায়ে কেরামের সম্মানহানি, নেতৃত্বস্থানীয়দের উপর আক্রমণের নোংরা রাজনীতির দ্বারা এই জাতিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কেননা এই জাতি তাঁদের পথ চলার নির্দেশ ও অনুপ্রেরণা পায় আরশের উপর সমাসীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে। বনু হাশেম থেকে পছন্দ করা নবীর মানহাজ অনুযায়ী এই জাতি প্রশিক্ষিত হয়। এই জাতি কুরআনের নির্দেশ ও নবীর জ্ঞান দ্বারা পথ চলে।
প্রিয় মুসলিম উম্মাহ,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার পরিবারকে সাহায্য করা অব্যাহত রাখুন। আল্লাহর রাসূলের সম্মান রক্ষা করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এই কথা ভুলে যাবেন না –
النَّبِيُّ أَوْلَىٰ بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ ۖ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ ۗ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَىٰ بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّـهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ إِلَّا أَن تَفْعَلُوا إِلَىٰ أَوْلِيَائِكُم مَّعْرُوفًا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا ﴿٦﴾
অনুবাদঃ নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজিরগণের মধ্যে যারা আত্মীয়, তারা পরস্পরে অধিক ঘনিষ্ঠ। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করতে চাও, করতে পার। এটা লওহে-মাহফুযে লিখিত আছে। (সূরা আল-আহযাব ৩৩:৬)
এবং
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ ﴿١٢٨﴾
অনুবাদঃ তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। (সূরা আত-তাওবা ৩:১২৮)
আপনার জন্য শুধু এতটুকু মনে রাখাই যথেষ্ট যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের সাথে কথা বলার সময় আপনার কথা তাদেরকে বলেছেন, আপনাকে ভালোবাসার সাথে স্মরণ করেছেন, আপনার সাথে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন!!! আপনার জন্য তার অন্তরে দয়া ও ভালবাসা ছিল। হাশরের ময়দানের কঠিনতম সময়ে একমাত্র আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে রক্ষার জন্য আমাদের রবের নিকট মাফ চাইতে থাকবেন। উম্মাহকে রক্ষার জন্য রবের নিকট তিনি বলতে থাকবেন – ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত, আমার উম্মত’।
আমরা মুসলিম জাতির মাজলুমদের আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আহবান করছি। আপনারা আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন, তার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে আমাদের মাজলুমদের জন্যই বিজয় দান করেন। আমরা তাদেরকে জিহাদের দিকে আহবান করছি। আমরা তাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূলের শত্রুদের বিরুদ্ধে এমন এক পদ্ধতির দিকে আহবান করছি যা কুফফারদের নীরব মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে ইনশা আল্লাহ। এই পদ্ধতি তাদেরকে অপমানিত করবে, নীরবে তাদেরকে নিঃস্ব করে দিবে, এমনকি এক ফোটা রক্ত না ঝড়িয়েও তাদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।
পদ্ধতিটি হল – তাদের পণ্য বর্জন করা। তাদের সকল পণ্য বর্জনের দ্বারা তাদেরকে নীরবে শাস্তি দিন। তাদের পণ্য বর্জনের মাধ্যমে তাদেরকে পরাজিত করুন। এই কাজটি আপাত দৃষ্টিতে গৌণ হলেও অর্থনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক কার্যকর। এই কাজকে আল্লাহ ও তার রাসূলকে সাহায্য করার একটি উপায় হিসেবে গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করার বিনিময়ে আপনার জন্য যে প্রতিদান রয়েছে তার কথা স্মরণ করুন। আমরা সকলেই জানি জিহাদ করতে হয় জান ও মাল দিয়ে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জিহাদের একটি সুরত হল – শত্রুদের পণ্য বর্জন করা।
হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাহ, জীবনের সকল ক্ষেত্রে, সকল স্তরে জিহাদ ছড়িয়ে দিন। আপনাদের জান, মাল এবং শত্রুদের পণ্য বর্জনের দ্বারা জিহাদ জারি রাখুন।
হে মুসলিম উম্মাহর যুবকেরা, নিজেদেরকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করুন। যুদ্ধের ময়দানের সম্মুখ সারিতে আপনাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। বরকতময় কাফেলাগুলোর সাথে নিজেরা যুক্ত হন এবং অন্যদেরকে যুক্ত হতে উৎসাহিত করুন। কঠিন জীবন যাপনে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলুন। অল্প সামগ্রীতে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। মুসলিম উম্মাহকে চলমান ও আগত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তুলুন। তাদেরকে বার বার ‘শার্লি হেবদো’ হামলার বীরদের ঘটনা শুনান। তাদেরকেও এমন বীরত্বপূর্ণ হামলার জন্য উৎসাহিত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান রক্ষার জন্য এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি। কুফফারদের – তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে আল্লাহর রাসূলের সাথে একসাথে জান্নাতে থাকার উপযোগী করে নিন!
আমাদেরঅন্তরেরপ্রশান্তিআমাদেরপ্রিয়মুজাহিদভাইদেরপ্রতিবিশেষবার্তা
সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানকারী মুজাহিদ ভাইয়েরা, বিশেষ করে আল কায়দার যেসকল মুজাহিদ ভাইরা মালি, ইয়েমেন, ইসলামিক মাগরিব, সোমালিয়া ও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে অবস্থান করছেন তাদের আমরা আহবান জানাচ্ছি –ক্রুসেডার ফ্রান্স কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কটূক্তির বিপরীতে আপনারা তাদেরকে সমুচিত জবাব দিন। যে আল্লাহ আমাদেরকে ইমান ও শরিয়ত দিয়ে সম্মানিত করেছেন তার নির্দেশ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আপনাদেরকে বলছি – তাদের তথাকথিত বাক-স্বাধীনতার সমুচিত জবাব দিন। এরা দ্বারা আপনাদের ঈমানের দৃঢ়তা, আল্লাহর রাসূলের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা এবং তার সম্মান রক্ষার্থে আপনাদের ব্যাকুলতা বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে যাক। আল্লাহর শত্রুদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যাক যে, আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে কটূক্তি করা – ইসলামি আইন অনুযায়ী বড় রকমের অপরাধ এবং এটার জন্য শাস্তি পেতেই হবে। এই অন্যায়ের ক্ষেত্রে কোন মাফ নেই।
পরিশেষে আল্লাহ ও তার রাসূলের শত্রু ম্যাক্রনের প্রতি আমাদের বার্তা
তুমি সেসকল সন্ত্রাসীদের লালন পালন করছো যারা আল্লাহর রাসূলের সম্মানে আঘাত করেছে। তথাকথিত বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলে তারা বার বার আল্লাহর রাসূলের সম্মানে আঘাত করেছে, আর তুমিও সকল ধর্মের মৌলিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করে তাদেরকে তাদের কাজে সমর্থন দিয়েছ। এর ফলে শীঘ্রই তুমি যে প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবে, সেটা থেকে তোমার এই দুর্গন্ধযুক্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং বাক-স্বাধীনতা তোমাকে বাঁচাতে তো পারবেই না বরং তোমার জন্য লজ্জা বয়ে আনবে। আর এই তীব্র প্রতিক্রিয়া যখন তোমার উপর আপতিত হবে, তখন তুমি আল্লাহর এই কথার বাস্তবতা বুঝতে পারবে –
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّـهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا ﴿٥٧﴾
অনুবাদঃ যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা আল-আহযাব ৩৩:57)
হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন আমরা পৌঁছে দিয়েছি। হে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের সম্মান রক্ষার্থে নেওয়া পদক্ষেপগুলোতে আপনি সাহায্য করুন এবং বিজয় দান করুন!
সালাম ও দরূদ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর।
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين