সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের নিকট একটি পবিত্র আমানত। তাদের শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরণই শুধু আমাদের দায়িত্ব নয়। বরং, তাদেরকে সকলপ্রকার অনিষ্টকর বস্তু থেকে রক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য।
এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের সকলেই (দায়িত্ব আদায়ের ক্ষেত্রে) একজন রাখাল (এর মত)। এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্তদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। একজন ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য রাখালস্বরূপ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) এবং সে তাদের সকলের হেফাজতের জিম্মাদার।” (বুখারী ও মুসলিম)
আমাদের ছোট্ট সন্তানদের বিভিন্ন প্রকার অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এমনই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
১) দু’আ করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়শই তাঁর স্নেহের নাতী হাসান(রাযিঃ) এবং হুসাইন(রাযিঃ) এর নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করতেন,
“আমি তোমাদের জন্য সকল প্রকার শয়তান, হিংস্রজন্তু ও বদনজরের ক্ষতি থেকে আল্লাহর পূর্ণতর বাণীর নিকট আশ্রয় চাই।”
এভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য সকাল, সন্ধ্যা আল্লাহর নিকট দু’আ করার উপদেশ গ্রহণ করতে পারি।
২) তিন ক্বুল ও আয়াতুল কুরসী পাঠ
আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার জন্য দু’আ করার অংশ হিসেবে কুরআনের শেষ তিনটি সূরা অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করার বিশেষ ফযিলত ও গুরুত্ব রয়েছে। এই সূরাগুলো পাঠ করে সন্তানদেরকে দম করতে পারেন; যা তাদেরকে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে হেফাজত করবে ইনশাআল্লাহ। আয়েশা(রাযিঃ) বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিরাতে ঘুমানোর পূর্বে তার দুই হাত যুক্ত করতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে তার হাতে ফুঁ নিতেন। অতঃপর তার দুই হাতকে সারা শরীরে মালিশ করতেন এবং এভাবে তিনবার করতেন।” (বুখারী)
ইবনে আবিস আল-জুহানী(রাযিঃ) নামক এক সাহাবীকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে ইবনে আবিস! আমি কি তোমাকে এমন উৎকৃষ্ট জিনিসের কথা বলব না, যা নিরাপত্তাকামীদের জন্য নিরাপত্তা প্রদান করে?” তিনি উত্তরে বলেন, ‘নিশ্চয়ই, ইয়া রাসুলাল্লাহ!’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাঁকে উত্তর দিলেন,
“সুরা ফালাক ও সুরা নাস এই দুইটি সূরা।”
একইভাবে, কুরআনুল কারীমের সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত অর্থাৎ আয়াতুল কুরসী শয়তানের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থণার জন্য একটি পরিচিত আমল। পিতামাতা প্রতিদিন তিন ক্বুল ও আয়াতুল কুরসী পাঠ করে তাদের সন্তানের উপর দম করতে পারেন।
৩) সূরা বাকারা
কোন বাড়ীতে সূরা বাকারা পাঠ করা হলে ঐ বাড়ী থেকে শয়তানকে দূরে রাখে। বিভিন্ন শয়তানি কর্ম যেমন বদনজর, বশীকরণ, কালো জাদু প্রভৃতি থেকে আপনার পরিবারকে নিরাপদ রাখার জন্য শয়তানকে আপনার বাড়ী থেকে দূরে রাখা জরুরী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“শয়তানের জন্য তোমাদের ঘরগুলোকে কবরের মত করে রাখ। আর যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা হয়, শয়তান সেই ঘর থেকে পালিয়ে যায়।” (মুসলিম)
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি রাতে তাঁর ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করবে, সে ঘরে তিন রাত পর্যন্ত শয়তান প্রবেশ করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি দিনে তাঁর ঘরে এটি তেলওয়াত করবে, শয়তান সে ঘরে তিন দিন প্রবেশ করতে পারবে না।” (তাবারানী)
৪) টয়লেট ব্যবহার রীতি
টয়লেট একটি নোংরা ও অপবিত্র স্থান। আর শয়তান ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা নোংরা, আবর্জনা, ও অপবিত্রের দিকেই আকৃষ্ট এবং সেখানেই বসবাস করে। এ কারণে টয়লেট ব্যবহারের সময় আমরা যাতে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারি, সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে টয়লেট ব্যবহার রীতি সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করেছেন। সন্তানদেরকে এসকল নিয়মকানুন শিক্ষা দেওয়া পিতামাতার কর্তব্য।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেটে প্রবেশ করার এবং টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর দু’আ শিখা দিয়েছেন। এবং যারা এ দু’আ দুটি পাঠ করবে তাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজতের গ্যারান্টি দিয়েছেন।
তাই আমাদের উচিত দু’আ গুলো নিজে শিখে বিয়ে সন্তানদেরকেও শেখানো। এজন্য আপনি এই দু’আ গুলো এমন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখতে পারেন, যাতে টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে ও বের হওয়ার পর এগুলো নজরে আসে এবং এর মাধ্যমে সকলের পড়ার অভ্যাস হয়ে যায়।
৫) মাগরিবের সময় সতর্কতা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মাগরিবের সময় শিশুদেরকে ঘরের বাইরে যেতে দিতে নিষেধ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে, তখন তোমরা তোমাদের শিশুদের ঘরের ভেতরে নিয়ে আস, কেননা শয়তান এসময় পথে বের হয়। রাত হওয়ার ঘন্টাখানেক সময় পার হলে তাদেরকে আবার ছাড়তে পারো” (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তা যথার্থ, উত্তম ও পরিপূর্ণ উপদেশ। তার উপদেশ পালনের মাধ্যমে আমাদের সন্তানদেরকে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে আমরা তাদের জন্য পরিপূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারি।
আল্লাহ আমাদের এসকল উপদেশ পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।