অভিজিৎ হত্যার রায়, বিচারের নামে তামাশা বলে বিবৃতি দিয়েছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। শুক্রবার রাতে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী সংগঠনের পক্ষে এ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা প্রিয় রাসুল (সা.) এবং উম্মাহাতুল মুসলিমিনদের নিয়ে অব্যাহত কটূক্তিমূলক ও পর্নোগ্রাফি লেখালেখির আখড়া মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক পরিচালক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায় হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলোর এক রিপোর্টে আমরা জানতে পেরেছি যে, আদালত বলেছেন, মতপ্রকাশে সাহস দিতেই তারা এই রায় দিয়েছেন। অথচ সাধারণত যেকোনো রায়ের পর সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হলো কিনা— সেটাই হলো আসল বিষয়।
বিবৃতিতে ইসলামাবাদী আরও বলেন, প্রথম আলোর গত বছরের এক রিপোর্টে আমরা জেনেছি, মামলার সর্বমোট সাক্ষী ৩৪ জন। অথচ রায়ের আগে পরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। এমনকি কোন কোন সাক্ষীর বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে রায় দেওয়া হয়েছে তাও দেশবাসী জানতে পারেনি। এই মামলার প্রধান চাক্ষুষ সাক্ষী অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমদ বন্যা, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। রায়ের পরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা এক বিবৃতিতে তিনি বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অসঙ্গতি ও অভিযোগ তুলে ধরেছেন। অভিজিত হত্যার রায় যে বিচারের নামে তামাশা, সেটা তার বক্তব্যেই বুঝা যায়। তিনি লিখেছেন, ‘গত ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে এই মামলার তদন্তকারীদের কেউই আমার সাথে যোগাযোগ করেনি; অথচ আমি এই হামলার সরাসরি শিকার এবং সাক্ষী। জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জনসমক্ষে মিথ্যা বলেছেন যে, আমি নাকি এই বিচারের সাক্ষী হতে রাজি হইনি! কিন্তু সত্য হলো, বাংলাদেশের সরকার বা প্রসিকিউশন থেকে কখনোই আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি।’
সন্দেহ নেই, প্রধান চাক্ষুষ সাক্ষীকে বাদ দিয়েই অভিজিৎ হত্যার বিচার ও রায় হয়েছে। প্রধান সাক্ষীর জীবদ্দশায় তাকে ছাড়া আদালতে কীভাবে অভিজিৎ হত্যার সাথে প্রত্যেক অভিযুক্তের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলো— সেটা একটি জরুরি প্রশ্ন। তাছাড়া সাক্ষীদের বক্তব্যসমূহের কোনো বর্ণনা কিংবা অভিযুক্তরা আদৌ অভিজিৎ হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে কিনা— সেসব বিষয় এখন পর্যন্ত রহস্যজনকভাবে মিডিয়ায় তুলে ধরা হচ্ছে না। আর এতেই অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, কতটা দুর্বল ও ঠুনকো তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বিচার করা হয়েছে। তা নাহলে রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের ইস্যু মুখ্য না হয়ে ‘মতপ্রকাশে সাহস দিতে’ এবং ‘নিহত ব্যক্তির আত্মীয়রা শান্তি পাবেন’—এই ধরনের আবেগসর্বস্ব আলাপ কেন আসবে?
এছাড়া অভিজিতের স্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, তাদেরকে হামলাকারী গ্রুপটির নেতৃত্বে থাকা শরীফুল নামের একজন আসামি পুলিশ কাস্টোডিতে থাকা সত্ত্বেও পরে তাকে ক্রসফায়ারে কেনো মেরে ফেলা হয়েছিল? রায় পরবর্তী অভিজিতের স্ত্রীর দেওয়া এই বিবৃতি বিচারপ্রক্রিয়াকে জোরালোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সবমিলিয়ে অভিজিৎ হত্যার রায়কে আমরা বিচারের নামে তামাশা ছাড়া আর কী বলতে পারি!
তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি হলো, মজলুম আশেকে রাসুল (সা.) ভাইদের কারাদণ্ড রহিত করে তাদেরকে দ্রুত জামিনে মুক্তি দিন। যেহেতু দৃশ্যত উপযুক্ত সাক্ষী কর্তৃক তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করা যাচ্ছে না।
বিবৃতিতে আজিজুল হক ইসলামাবাদী আরও বলেন, আমরা আগেও বলেছি, সাধারণত আইন হাতে তুলে নেওয়া এবং কোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু শাতিমে রাসুল তথা রাসুল (সা.)-এর অবমাননার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকালে সরকার উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে রাসুল (সা.) এর অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। অভিজিৎ পরিচালিত ইসলামবিরোধী মুক্তমনা ব্লগের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সব জেনেও সরকার তখন ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে রাসুলপ্রেমিকদের হৃদয় রক্তাক্ত হওয়ায় তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। সরকার যথাসময়ে রাসুল (সা.) এর অবমাননাকারীদের ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নিলে আর একের পর এক আইন হাতে তুলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতো না।
সরকারের সেই ব্যর্থতা এড়িয়ে গিয়ে মতপ্রকাশের প্রসঙ্গ আসতে পারে না। আর স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাসুল (সা.)-কে গালি দেওয়াকে নোংরামি বলে সাব্যস্ত করেছিলেন এবং তথাকথিত মুক্তচিন্তার সমালোচনা করেছিলেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মানে এই নয় যে, কেউ কারো মা-বাপ ধরে গালাগালি করার অধিকার রাখে কিংবা রাসুলের অবমাননা করে মুসলমানের অন্তরে আঘাত দেবে।