ইসলাম মানে শান্তি। শান্তির পথে আহ্বান হলো দাওয়াত। দাওয়াতের পদ্ধতিতে রয়েছে বিশেষ সুন্নাত, যা অনুসরণ করলে শান্তির আহ্বান সফল হবে, সমাজের সর্বস্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা যেমন শরিয়তের বিধান দিয়েছেন, তেমনি তা বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ সুন্নত পদ্ধতিও দিয়েছেন। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা এর আগে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষণকারী। সুতরাং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে তুমি তাদের ফয়সালা নিষ্পত্তি করো এবং যে সত্য তোমার নিকট এসেছে, তা পরিত্যাগ করে ওদের খেয়ালখুশির অনুসরণ কোরো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরিয়ত ও স্পষ্ট পথপদ্ধতি নির্ধারণ করেছি। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন, তা দ্বারা তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান। তাই তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করো। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছিলে সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদের অবহিত করবেন।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৪৮)।
ইসলাম আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র পরিপূর্ণ জীবনবিধান। প্রথম মানব ও প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে যা সুসম্পন্ন হয়েছে আখেরি নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মাদ (সা.)–এর মাধ্যমে। সব নবী–রাসুলই দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজ করেছেন। সরলভাবে বলতে গেলে পুরোটাই দাওয়াতি কাজ। যেহেতু নতুন কোনো নবী ও রাসুল আর আসবেন না, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এই কাজ নবীর উম্মতদেরই করে যেতে হবে।
বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার–প্রসার হয়েছে দাওয়াতি কাজ ও উত্তম আদর্শের মাধ্যমে। এর জন্য দরকার উম্মতের প্রতি দরদ, স্নেহ, মায়া, মমতা ও ভালোবাসা। কোরআন–সুন্নাহর আলোকে দ্বীনি দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজে সুফল বা সফলতার জন্য চারটি বিষয় অতীব জরুরি। যথা মহব্বত, আজমত, হেকমত ও খেদমত। অর্থাৎ দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের ক্ষেত্রে প্রথমত ভালোবাসা ও দরদ থাকতে হবে; দ্বিতীয়ত সম্মানবোধ থাকতে হবে, তথা বিনয়–নম্রতাসহকারে দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজ করতে হবে; তৃতীয়ত কৌশলী হতে হবে এবং স্থান–কাল–পাত্র বুঝে দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগ পেশ করতে হবে; চতুর্থত দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের জন্য খেদমত বা সেবার পথ অবলম্বন করতে হবে। সর্বোপরি দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজে সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ ও লালন করতে হবে, কখনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া মনে স্থান দেওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আহ্বান করো তোমাদের রবের পথে, হিকমাহ এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১২৫)।
বিশ্বসভ্যতার রক্ষক মুমিন ও বিশ্বের শান্তিকামী মুসলিম হিসেবে দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজে মননে, চিন্তায় ও কর্মে আমাদের উদার হতে হবে। সারা বিশ্বকে একই পরিবার ভাবতে হবে। পুরো মানবজাতি একই পরিবারের সদস্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করবে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)।
কাউকে হেয় জ্ঞান করা যাবে না, কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবা যাবে না। কারও প্রতি হিংসা–বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না এবং কাউকে অশ্রদ্ধা করা বা অসম্মান করা সমীচীন হবে না। আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘তুমি এমন উত্তমভাবে মন্দের মোকাবিলা করবে, যাতে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে, সে–ও প্রাণের বন্ধু হয়ে যাবে।’ (সুরা-৪১ হা–মিম সিজদাহ, আয়াত: ৩৪)।
ইসলামি দাওয়াতি কাজে নিজের জ্ঞান, গরিমা, যোগ্যতা ও সামর্থ্যের ওপর আত্মতৃপ্ত হওয়া যাবে না। সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের উদ্দিষ্টদের জন্য দোয়া করতে হবে এবং নিজের ভুলত্রুটি অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও অপারগতার জন্য আল্লাহর কাছে শরমিন্দা থাকতে হবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআন মজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পর একে অন্যকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণের পরামর্শ প্রদান করে।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম