আল্লাহর যা পছন্দ করেন তাই করে থাকেন। বহু গ্রহ, নক্ষত্র ও ছায়াপথের মধ্য থেকে তিনি পৃথিবীকে জীবনের আবাস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সেরা হিসেবে তিনি মানুষকে বেছে নিয়েছেন।
মানুষের মধ্যে থেকে নবীদেরকে শ্রেষ্ঠ হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
নবীগণের মধ্য থেকে তিনি পাঁচজন রাসূলকে সেরা হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
এবং তাদের মধ্য থেকে তিনি আমাদের প্রিয় নবীকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
তেমনি সমস্ত দেশ থেকে তিনি মক্কা, মদীনা ও জেরুজালেমকে সবচেয়ে পবিত্র হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
কুরআনের সকল সূরার মধ্যে তিনি আল-ফাতিহাকে সর্বাধিক পঠিত হিসাবে বেছে নিয়েছেন এবং সমস্ত আয়াত থেকে আয়াতুল-কুরসীকে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
একইভাবে সকল মাসের মধ্যে তিনি রমজানকে সবচেয়ে সেরা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। আর সকল দিনের মধ্যে তিনি আরাফার দিনটিকে সেরা হিসাবে বেছে নিয়েছেন এবং সেই দিনটি আমাদের সামনে সমাগত।
বুদ্ধিমত্তার সাথে সময়কে ব্যবহার করুন
ইমাম শাফেয়ী(রহঃ) বলতেন, “আল্লাহ যদি কেবলমাত্র সূরা আল-আসর নাযিল করতেন তবে সেটিই যথেষ্ট ছিল, কারণ এর বার্তাগুলোই সবকিছু পরিবেষ্টন করে নেয়।”
সূরা আল-আসরের কেন্দ্রীয় বার্তাটি হল সময় ফুরিয়ে আসছে, নির্বাচিত কয়েকজন বাদে সকলেই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। ব্যতিক্রম হল ঈমানদার, সৎকর্ম সম্পাদন কারী, একে অপরকে সত্যের দিকে আহ্বান কারী এবং একে অপরকে ধৈর্য্য ধরে রাখার দিকে আহ্বানকারী।
এই বিশেষ দিনগুলি আমাদের ইবাদতে উত্সাহ দিতে সহায়তা করে এবং আমাদের সময় যে আসলেই খুব কম তা বুঝতে সাহায্য করে।
আরাফার বিশেষ দিনটি যেমন কেটে যাবে, তেমনি আমাদের জীবনও কেটে যাবে।
বিখ্যাত আলেম ইমাম গাজ্জালী(রহঃ) বলেছেন, “হে হৃদয়, তোমাকে জীবনের চেয়ে মহা মূল্যবান আর কোন সম্পদ দেওয়া হয়নি। জীবনের শেষ নিঃশেষ ত্যাগ হওয়ার সাথে সাথে এর বাহকের অস্তিত্বও শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ তোমাকে সময় দিয়েছেন অর্থাৎ তোমার মৃত্যুকে বিলম্বিত করেছেন। তিনি তোমাকে অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছেন। অতএব সময়ের অপচয় করো না। প্রতিটা নিঃশ্বাসই অমূল্য রত্ন। তুমি যদি নেক আমল দ্বারা এগুলো পূর্ণ না করো, তবে তা তীব্র দুর্গন্ধময় অন্ধকারে পূর্ণ হবে এবং চারিদিক আচ্ছন্ন করে দিবে। আর যে সময়গুলো তুমি ঘুমিয়ে বা হেলাফেলায় অথবা কোন দুনিয়াবী কাজে ব্যয় করেছ তার জন্য তুমি দুঃখিত বা পুলকিত অনুভব করবে না। কিন্তু যে সময়টুকু তুমি কোন কাজে ব্যবহার করনি তার জন্য অনুশোচনা করবে।”
আরাফার দিনে ৩টি করণীয়
আরাফার দিনে আমাদের যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত করতে হবে তা হল রোজা, যিকির ও দু’আ।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“আরাফার দিনের দু’আ হল সর্বোত্তম দুআ” (তিরমিযী)
তিনি আরও বলছেনঃ
“আরাফার দিনের রোজা বিগত বছর ও আগামী বছরের গুনাহসমূহকে মাফ করে দেবে বলে আমি আশা রাখি” (মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় তিনি বলেছেনঃ
“যিলহজ্জের প্রথম দশকের চেয়ে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহ্র নিকট অধিক পছন্দনীয়।” (বুখারী)
আরেক বর্ণনায় আছেঃ
“যিলহজের প্রথম দশকের প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার সওয়াব এবং প্রতিরাতের ইবাদত এক বছরের ইবাদতের সমান সওয়াব।” (তিরমিযী)
আরাফার দিন যেভাবে কাটাবেন
সুতরাং, এই দিনটির সর্বোত্তম ব্যবহার করার চেষ্টা আমাদেরকে করতে হবে এবং এজন্য আমরা একটি রুটিনের পরামর্শ দেব, যা কেউ ব্যস্ত থাকলেও তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন; অতঃপর সাহরি করুন। তাহাজ্জুদের সময় প্রচুর দু’আ করুন।
ফজরের নামায আদায় করুন এবং এরপর কুরআন তেলাওয়াত করুন। আরাফাহ ও যিলহজ্জের জন্য বর্ণিত কিছু নির্দিষ্ট যিকির রয়েছে, যার প্রত্যেকটি আমরা ১০০বার করে পড়তে পারি।
– সুবহানাল্লাহ
– আলহামদুলিল্লাহ
– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
– আল্লাহু আকবার
– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শরীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদির।
এরপর আপনি একটু বিশ্রাম নিতে পারেন।
যোহরের পূর্বে ৪-৮ রাকাআত চাশতের নামাজ আদায় করুন। এবং যোহরের পূর্বে ও পরে সুন্নাতের সাথে যোহর নামাজ আদায় করুন।
আছরের নামাজের পূর্বেও ৪ রাকাআত সুন্নাত পড়ুন।
আছর থেকে ইফতারের সময় না হওয়া পর্যন্ত দু’আয় মশগুল থাকুন।
এটি একটি গাইডলাইন মাত্র। কেউ ইচ্ছা করলে আরও বেশি নফল আমল করতে পারেন।
আল্লাহ আমাদের সকলের নামাজ, রোজা, ঈদ ও কুরবানি সহ সকল নেক আমলকে কবুল করুন।
আমীন