হেফাজতে ইসলামসহ আরো কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারকে ব্লগার এবং নাস্তিকদের আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চাপ দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী দলগুলোকে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। তাছাড়া কোনও কোনও এলাকার অলিতে-গলিতে দেয়ালে দেয়ালে নাস্তিকদের পোষ্টার লাগিয়ে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রবিবার (ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২০) হৃদয় কাজী নামের হেফাজতে ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী ‘এথিস্ট নোট’ নামের একটি ম্যাগাজিনের সকল ব্লগার/ নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানা যায় যে, ‘এথিস্ট নোট‘ নামের এই ওয়েবসাইটটি ইসলাম ধর্মকে অত্যন্ত নোংরাভাবে ফুটিয়ে তুলে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত করে। মূলত যা দেখেই ইসলামী সংগঠনগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
এ বিষয়ে মামলার বাদি হৃদয় কাজীর সাথে কথা হলে তিনি আমাদের বলেন ’’হঠাৎ করেই অনলাইনে এই ম্যাগাজিনটি আমার চোখে পড়ে, আমি কৌতুহল বশত এটি ডাউনলোড করে দেখতে পারি সেখানে ধর্ম, মুসলিম, কোরআন এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে নানাবিদ কুরুচিপূর্ন শব্ধ ব্যবহার করে ‘বিনাশ হোক ধর্ম‘ নামে এই মাগাজিনটি প্রকাশিত করে, যা একজন মুসলিম হিসেবে মেনে নিতে পারিনি এবং আমি মনে করি এদেরকে কতল (হত্যা) করা আমার এবং আমাদের সকল মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে’
এদিকে মিছিল এবং সমাবেশে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা সাংবাদিকেদের জানান যে, ‘‘বর্তমানে নাস্তিক এবং কিছু নব্য ব্লগারদে উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে এগুলো মেনে নেওয়া কোনও মুসলমানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কলিজার টুকরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।‘‘
মামলার আসামীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের যে কয়টি নাম বলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন এথিস্ট নোট এর সম্পাদক খায়রুল্লাহ খন্দকার, লেখক সাইফুল ইসলাম, শ্রাবণী শিকদার, কাজী মোশাররফ হোসেন, সুজন চন্দ্র দেব, সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন শাওন, হায়াত হামিদ উল্লাহ রবিন, আমিনুল হক, আদনান সাকিব, এম ডি তোফায়েল হোসাইন, জোবায়ের হোসেন, এম ডি মাহাদি হাসান,আবু হানিফ, কাজী ওয়াহিদুজ্জামান সহ আরো অনেকেই।
তাদের মধ্যে আর একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘নাস্তিকদের গালি দিলে কারও গায়ে লাগলে আমার করার কিছু নাই। আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না।’’
এদিকে সমাবেশ চলাকালে মুফতি আহমদ উল্লাহ জিহাদী উপস্থিত থাকা দ্বীনদার ভাইদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘‘যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।‘‘
হেফাজেত ইসলামে এক কর্মীর কাছে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘‘সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ যারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ এবং আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, গালি-গালাজ করবে, কটূক্তি করবে তারা সবাই আমাদের টার্গেট। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের হত্যা করবো।’’
উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক এবং ব্লগারদের ছবি যেভাবে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছে, ২০১৬ সালে ঠিক এভাবেই ফেসবুক পেজে চার ব্লগারের ছবি প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা হচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন, সানিউর রহমান, শাম্মি হক ও অনন্য আজাদ। তারা সবাই এখন প্রবাসী। জঙ্গি হামলার ভয়ে এসব ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন।