উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গনহত্যা চলার সময় একটি পিসিআর কল করা হয়েছিলো এবং সেই ফোন কল থেকে দিল্লি পুলিশ এক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষদর্শীর খোঁজ পেয়েছে। এই ব্যক্তি জানিয়েছেন সশস্ত্র গেরুয়া সন্ত্রাসীরা কীভাবে মুসলিমদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করে নর্দমায় ফেলে দিয়েছে। এই গণহত্যার তিনজন নিহতের চার্জশিটে উঠে এসেছে এমনই লোমহর্ষক তথ্য।
তাঁরা হলেন আমিন, ভুরে আলি ও হামজা যাঁদের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ০৫ মিনিটে হত্যা করা হয়েছিলো। ওই কলার পুলিশকে আরও বলেছেন, এক মুসলিমের বাইকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই বাইকচালক প্রাণ বাঁচাতে নর্দমায় ঝাঁপ দেয়।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই কলার দিল্লির গঙ্গা বিহারের বাসিন্দা। তাঁর বয়ানকে এখন অন্যতম প্রমাণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। চার্জশিটের বিবরণে জানা গিয়েছে যে তিনজন মুসলিমকে যখন মেরে ফেলা হয় তখন ওই কলার প্রথম কল করেছিলেন। এই হিন্দু কলার ২০ মিনিট পর আবার কল করে বলেন, ‘মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদের বাইক জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
ওই কলার সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। গঙ্গা বিহারে এক দল দাঙ্গাকারী তাঁকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে। আচমকা বাইকের ব্রেক কষায় তাঁর বাইক পিছলে যায় ও তিনি পড়ে যান। উঠে দেখেন তাঁর বাইকটি সেখানে নেই। তিনি পিসিআর কল করেন এবং তারপর গোকালপুরি থানায় হাজির হন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। পরের দিন আসতে বলা হয় তাঁকে।
যথারীতি পর দিন বিকাল ৪টায় গোকালপুরি থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি দেখেন, জোহরিপুর পুলিয়ায় পাথর, লাঠি, তলোয়ার, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে এক বিশাল উগ্র হিন্দু জনতা ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনি তুলছে। তারা প্রত্যেকের পরিচয় নিচ্ছিলো এবং মুসলিম পেলেই পিটিয়ে খুন করে নর্দমায় ফেলে দিচ্ছিলো। এই জনতার অধিকাংশেরই মুখ হেলমেট বা কাপড়ে ঢাকা ছিল।
২৬ ফ্রেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাইকের সন্ধানে তিনি ভাগীরথী বিহারের নর্দমায় গিয়েছিলেন। গিয়ে দেখলেন যে লোনি থেকে আসা এক লোককে উন্মত্ত জনতা আটক করেছে। সওয়াল-জবাব করে নিশ্চিত হয় যে লোকটি মুসলিম। তারপর তাঁকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করে নর্দমায় তাঁর দেহ ফেলে দেয়। এরপর বাইকে করে আরও দুই আরোহী আসছিলেন। তাঁদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটানো হয়। ধর্মীয় পরিচয় জেনে অনেককে তারা হত্যা করে।
এই ফোন কলার বলেছেন যে, ওই জনতার কয়েকজনকে তিনি চিনিয়ে দিতে পারবেন। চার্জশিটে তাঁর বয়ান অনুযায়ী, সুমিত ও অঙ্কিত ফৌজ দাঙ্গাকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় এই কলার প্রায় সকলকেই চেনেন। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখে বাড়ি ফিরে তিনি পিসিআর নম্বর ১০০-তে কল করেন দু’বার।
দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী একই বয়ান দিয়েছেন। চার্জশিটে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ‘এই ঘটনা চাক্ষুষ করার পর এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে কাউকে জানাতে পারেননি। পরে পুলিশকে জানানো উচিত বলে মনে করেন।’ এই পরিকল্পিত খুনের ঘটনায় পুলিশ ৯ জনের নাম করেছেন। এরা হল লোকেশ সোলাঙ্কি (১৯), পঙ্কজ শর্মা (৩১), অঙ্কিত চৌধুরি (২৩), প্রিন্স (২২), যতীন শর্মা (১৯), হিমাংশু ঠাকুর (১৯), বিবেক পাঞ্চাল (২০), ঋষভ চৌধুরি (২০) ও সুমিত চৌধুরি (২৩)।