১. ‘আল্লাহর ওপর ইমান’-সংক্রান্ত আলোচনার (পৃ. ৫১) অধীনে ‘আল্লাহ’র সংজ্ঞা বর্ণনা করা হয়েছে,
’الله علم على الأصح اسم للذات الواجب الوجود المستجمع بجميع صفات الكمال.
আল্লাহ ওই চিরন্তন সত্তার নাম, যাঁর অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবী, যিনি সমস্ত গুণাবলির অধিকারী।’
এখানে অসতর্কবশত সংজ্ঞার শেষাংশের অনুবাদ ভুল করার কারণে কথাটি বিকৃত হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা সমস্ত ‘সিফাতে কামালে’র অধিকারী। অর্থাৎ কামাল (পরিপূর্ণতার) যত গুণ রয়েছে, সব গুণের অধিকারী তিনি। এমন কোনো সিফাতে কামাল নেই, যা তাঁর নেই। লেখকের অনুবাদ থেকে ‘কামাল’ শব্দটির অনুবাদ বাদ পড়ায় এখন এর অর্থ দাঁড়িয়েছে, আল্লাহ সমস্ত গুণের অধিকারী; সেই গুণ পূর্ণতার গুণ হোক বা ত্রুটির গুণ হোক। আল্লাহকে সমস্ত গুণের অধিকারী বললে অপরিহার্যভাবে তাঁর সত্তার ওপর সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটি আরোপিত হয়, যা থেকে তাঁকে পূতপবিত্র ঘোষণা করা ইমান আনয়নের প্রথম শর্ত। অসতর্কতাবশত এই অনুবাদটি ছুটে যাওয়া বিস্ময়ের ব্যাপার নয়; বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এতকাল ধরে, এতগুলো সংস্করণ হওয়ার পরে এটা অক্ষুণ্ন থাকা। অথচ বইটা বেফাক বোর্ডে ফজিলত ২য় বর্ষে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত। দেশের লাখো লাখো আলিম-তালিবুল ইলম গত এক যুগে এটা অধ্যয়ন করেছেন। বোর্ড কর্তৃপক্ষও এটা যথাযথ পর্যালোচনা করেই পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়াও আরও অনেক বিদগ্ধ আলিমের সম্পাদনার কথা বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখিত হয়েছে। যাহোক, আশা করছি, পরবর্তী সংস্করণে এটা শুধরে নেওয়া হবে। অন্যথায় ‘আল্লাহ’র ব্যাপারে আমাদের আর অমুসলিমদের সংজ্ঞায় পার্থক্য থাকবে না।
২. ‘আল্লাহর সত্তার প্রতি ইমানের কয়েকটি মৌলিক বিষয়’-সংক্রান্ত আলোচনার অধীনে (পৃ. ৫৮) লেখা হয়েছে,
‘তিনি স্থান ও কালের গণ্ডি হতে মুক্ত। কারণ স্থান হয়ে থাকে দেহবিশিষ্ট বস্তুর জন্য আর আল্লাহ তাআলা দেহ থেকে পবিত্র। তাঁর কোনো স্থান নেই—অর্থাৎ না তিনি আসমানে থাকেন, না জমিনে, না পূর্বে, না পশ্চিমে। সমগ্র জগৎ তাঁর সামনে একটা অণু পরিমাণ বস্তু সমতুল্য। তিনি কীভাবে তার মধ্যে সমাহিত হতে পারেন? বরং তিনি সর্বত্র বিরাজমান। কোনো স্থানের কোনো কিছু তাঁর অগোচরে নয়।’
লেখকের উপরিউক্ত বক্তব্যে সুস্পষ্ট স্ববিরোধিতা রয়েছে। উপরন্তু শেষাংশে তার বক্তব্য ভ্রান্ত ফেরকার বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। তার কথার প্রথমাংশই শেষাংশকে সমর্থন করে না। প্রথমে তিনি আল্লাহ তাআলাকে সকল স্থান ও কালের গণ্ডি থেকে মুক্ত ঘোষণা করলেন। আকাশ বা পৃথিবী কোনোটিই তাঁর অবস্থানস্থল নয়—পরিষ্কার ভাষায় এটা জানিয়ে দিলেন। কোনো দিকে তিনি সমাহিত নন—এটাও স্পষ্ট করলেন। কিন্তু এর পরক্ষণেই তিনি লিখলেন, ‘বরং তিনি সর্বত্র বিরাজমান’।
আচ্ছা, ‘সর্বত্র’ অর্থ কী? অভিধান বলছে, এর অর্থ হলো : (ক) সব জায়গায়, (খ) সর্বস্থানে, (গ) সবদিকে। এই তিনটি অর্থের কোনটি আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? জায়গা, স্থান ও দিক—এ সবই অনিত্য ও নশ্বর; আল্লাহ তাআলা নিত্য ও অবিনশ্বর। এগুলোর আদি আছে; পক্ষান্তরে আল্লাহ অনাদি। আর সর্বস্বীকৃত আকিদা হলো, তাঁর অবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসে না। সুতরাং জায়গা, স্থান ও দিক সৃষ্টির পরে তিনি এগুলোর ভেতরে প্রবেশ করবেন না। উপরন্তু জায়গা, স্থান ও দিক দেহবিশিষ্ট সত্তার বৈশিষ্ট্য আর আল্লাহ দেহ থেকে পূতপবিত্র। তাহলে তিনি কীভাবে সব জায়গায় অবস্থান করবেন? এটা তো হিন্দুয়ানি আকিদার নামান্তর। তদুপরি এটা তাঁর অবমাননাও বটে; কারণ এর দ্বারা নোংরা জায়গায়ও তাঁর অবস্থান অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়।
ইমাম মাতুরিদি রহ. তাঁর ‘কিতাবুত তাওহিদ’ গ্রন্থে সবিস্তারে এই ভ্রান্ত আকিদার খণ্ডন করেছেন। তিনি লেখেন,
‘আল্লাহ তাআলার অবস্থানের ক্ষেত্রে মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
(ক) তাদের কেউ কেউ ধারণা করছে যে, আল্লাহ তাআলা আরশের ওপর অধিষ্ঠিত। তাদের নিকট আরশ হলো একটি সিংহাসন; ফেরেশতাগণ যা বহন করে এবং এর চারদিক প্রদক্ষিণ করে। কেননা, আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, ‘সেদিন আপনার প্রতিপালকের আরশকে আটজন ফেরেশতা বহন করবে।’ ‘আপনি ফেরেশতাদের আরশ প্রদক্ষিণ করতে দেখবেন।’ অন্য আয়াতে রয়েছে, ‘যে সকল ফেরেশতা আরশ বহন করে এবং আরশের চারপাশ প্রদক্ষিণ করে।’
এরা পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছে। পবিত্র কুরআনের সুরা তহার ৫ নম্বর আয়াতে রয়েছে, ‘দয়াময় আরশের ওপর ইসতিওয়া করেছেন।’
এ ছাড়াও তাদের দলিল হলো, মানুষ দুয়ার সময় ওপরের দিকে হাত উত্তোলন করে এবং ওপর থেকে নিজেদের কল্যাণের প্রত্যাশা করে। এদের বক্তব্য হলো, আল্লাহ তাআলা পূর্বে আরশে ছিলেন না। পরবর্তীতে আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তারপর তিনি আরশে ইসতিওয়া করেছেন।’
(খ) কেউ কেউ বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাআলা সব জায়গায় রয়েছেন। এরা পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত দ্বারা দলিল দিয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি যদি কথোপকথন করে, তবে আল্লাহ তাআলা হন চতুর্থজন।’ অপর আয়াতে রয়েছে, ‘আমি তাদের ঘাড়ের রগের চাইতেও অধিক নিকটবর্তী।’ অন্য আয়াতে রয়েছে, ‘আমি তোমাদের চেয়ে মৃত ব্যক্তির অধিক নিকটবর্তী। অথচ তোমরা দেখো না।’ অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘অথচ তিনি সেই আল্লাহ, যিনি আকাশেও প্রভু এবং পৃথিবীতেও প্রভু।’
এরা ধারণা করেছে যে, যদি আল্লাহ তাআলাকে সব জায়গায় বিরাজমান না বলা হয়, তাহলে এর দ্বারা আল্লাহ তাআলাকে সীমিত করা হয়। প্রত্যেক সীমিত জিনিস তারচে বড় জিনিস থেকে ছোট। এটি আল্লাহর জন্য একটি ত্রুটি হিসেবে বিবেচিত।
এদের এই অসার বক্তব্যে আল্লাহ তাআলাকে স্থানের মুখাপেক্ষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে আল্লাহর জন্য সীমা সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা, কোনো কিছু যদি বাস্তবে কোনো স্থানে অবস্থান করে, তাহলে উক্ত বস্তুটির ওই স্থান থেকে বড় হওয়াটা সম্ভব নয়। কেননা, এটা যদি স্থান থেকে বড় হয়, তাহলে উক্ত স্থানে তার অবস্থান সম্ভব নয়। কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে থাকবে, অথচ সে স্থান থেকে বড় হবে, এটি একটি হাস্যকর বিষয়। সুতরাং যারা আল্লাহ তাআলাকে সর্বত্র বিরাজমান বলেন, তারাও আল্লাহ তাআলাকে সব জায়গার মধ্যে সীমিত করে দিয়েছেন। এদের বক্তব্য অনুযায়ী মহাবিশ্বের সীমা ও আল্লাহর সীমা একই হওয়া আবশ্যক হয়। আর মহান আল্লাহ তাআলা এগুলো থেকে সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে।
(গ) তৃতীয় দলের বক্তব্য হলো, আল্লাহ তাআলা সকল স্থান ও জায়গা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। রূপক অর্থে কখনো কোনো স্থানের দিকে আল্লাহ তাআলাকে সম্পৃক্ত করলেও এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তাআলা উক্ত স্থানের সংরক্ষণ ও লালন-পালনকারী।’
ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদি রহ. আরও লেখেন,
‘আল্লাহ তাআলার অবস্থানের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মূলনীতি হলো, যখন কোনো স্থান ছিল না, তখনো আল্লাহ তাআলা ছিলেন। কোনো জায়গার অস্তিত্ব না থাকলেও আল্লাহর অস্তিত্ব সম্ভব। আল্লাহ তাআলা অনাদি থেকে বিদ্যমান রয়েছেন। যেমন কোনো স্থানের অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও তিনি অবিনশ্বর রয়েছেন। মহান আল্লাহর সত্তা বা গুণাবলি পরিবর্তন-পরিবর্ধন, সংযোজন-বিয়োজন, হ্রাস-বৃদ্ধি ও বিলুপ্তি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।’
ইমাম আবু হানিফা রহ. লেখেন,
যখন কোনো স্থানই ছিল না, তখনো আল্লাহ ছিলেন। সৃষ্টির অস্তিত্বের পূর্বে তিনি ছিলেন। তিনি তখনো ছিলেন, যখন ‘কোথায়’ বলার মতো জায়গা ছিল না, কোনো সৃষ্টি ছিল না এবং কোনো বস্তুই ছিল না। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা।
তথ্যসূত্র : আল্লাহ কোথায়
৩. লেখক এই বইটি লিখেছেন মুতাকাল্লিমদের (আশআরি-মাতুরিদি) আকিদার প্রতিনিধিত্বস্বরূপ। যা বইয়ের শুরুতে ইলমুল কালাম-সংক্রান্ত আলোচনা থেকেই স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। কিন্তু পৃ. ৮৪-তে তিনি যা লিখেছেন, তা কখনোই মুতাকাল্লিমগণের আকিদা নয়; বরং তা অক্ষরবাদীদের আকিদা। তিনি লেখেন,
‘তাদের বক্তব্য হলো, আল্লাহর হাত, মুখ, আরশে সমাসীন হওয়া, আকাশে থাকা ইত্যাদিতে আমরা বিশ্বাস রাখি; তবে তার হাকিকত বা প্রকৃত স্বরূপ আমাদের জানা নেই। আল্লাহর হাত, মুখ ইত্যাদি আছে; তবে এগুলো আমাদের কারও মতো নয়।’
মুতাকাল্লিমগণ আল্লাহ তাআলার সিফাতে মুতাশাবিহাত (সাদৃশ্যমূলক গুণাবলি)-এর ক্ষেত্রে দু-ধরনের অবস্থান গ্রহণ করেছেন : (ক) তাফউইদ—অর্থাৎ অর্থ ও ধরন উভয়টি আল্লাহর ইলমে ন্যস্ত করা। (খ) তাওয়িল—অর্থাৎ শর্তাবলি রক্ষা করে সংগত কোনো ব্যাখ্যা করা। কিন্তু লেখক উভয়টির কোনোটিই গ্রহণ করেননি। উপরন্তু এই দুই ধারার বাইরে গিয়ে তৃতীয় ধারা অবলম্বন করে সেটাকে সম্মানিত মুতাকাল্লিমগণের দিকে সম্বন্ধিত করেছেন। মুতাকাল্লিমগণের ভাষ্য হলো, নুসুসে (কুরআন-হাদিসে) আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে যা কিছু প্রয়োগ করা হয়েছে, আমরা সেগুলোর প্রতি অবশ্যই ইমান রাখি। সুতরাং ‘ইয়াদ’, ‘ওয়াজহ’, ‘ইসতিওয়া’, ‘ফিস সামা’ ইত্যাদির ওপর ইমান রাখি; কিন্তু এগুলোর হাকিকত বা স্বরূপ আমাদের জানা নেই। কারণ সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার সাদৃশ্য নেই। আর আমরা আমাদের অপরিপূর্ণ জ্ঞান দ্বারা কখনোই তাঁকে পরিব্যাপ্ত করতে পারব না। সুতরাং আমরা কখনো বলব না, এই শব্দগুলো দ্বারা তা-ই উদ্দেশ্য, যা বান্দাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হলে এগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। সুতরাং ইয়াদ মানে হাত, ওয়াজহ মানে চেহারা, ইসতিওয়া মানে সমাসীন হওয়া ইত্যাদি আমরা কখনোই বলব না।
কিন্তু লেখক বললেন, ‘আল্লাহর হাত, মুখ ইত্যাদি আছে; তবে এগুলো আমাদের কারও মতো নয়।’ যখন আল্লাহর জন্য হাত, মুখ সাব্যস্ত করেই ফেললেন, তখন তো এর দ্বারা তাঁর অঙ্গ ও দৈহিক বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত হয়েই গেল। এরপর বললেন, আমাদের মতো নয়—এর অর্থ কী? গরুর হাত, জিনের হাত আর মানুষের হাতও তো এক নয়। উপরন্তু আগে বলে আসলেন, শব্দগুলোর হাকিকত জানেন না। যদি না-ই জানেন, তাহলে এগুলো মানে হাত আর মুখ, এটা কীভাবে জানা গেল? আমার যতটুকু ধারণা, তিনি কোনো আরবি কিতাব থেকে এই কথাগুলো নিয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে অসতর্কতাবশত সবগুলো শব্দের হুবহু আক্ষরিক অনুবাদ করেছেন। আর এর ফলে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বস্তুত কথাটা এমন হওয়া দরকার ছিল, ‘আল্লাহর ইয়াদ রয়েছে, তবে আমাদের ইয়াদের মতো নয় (অর্থাৎ তা হাত নয়)। আল্লাহর ওয়াজহ রয়েছে, তবে তা আমাদের ওয়াজহের মতো নয় (অর্থাৎ তা চেহারা নয়)। এগুলোর হাকিকত আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। আমরা তাঁকে উপমা ও সাদৃশ্যহীন এবং অতুলনীয় ঘোষণা করছি।
এখানে আরেকটি বিষয় হলো, যদি অক্ষরবাদীদের ধারা অনুসরণে অনুবাদও করা হতো, তবুও উপরিউক্ত অনুবাদটি এমন হওয়ার কথা ছিল না। আসলে আভিধানিক অর্থ দিয়ে শাস্ত্রীয় শব্দের অনুবাদ করা নিয়মসম্মত নয়। এমন হলে পরিভাষা শব্দটিও তার তাৎপর্য হারাত। ‘আরশে সমাসীন হওয়া’ কথাটিই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। ‘ইসতিওয়া’র অনুবাদ করলেও করা উচিত ছিল সমুন্নত হওয়া, ঊর্ধ্বে থাকা ইত্যাদি। কিন্তু শব্দটিকে বসা, উপবেশন করা বা অধিষ্ঠিত/উপবিষ্ট/সমাসীন হওয়া দ্বারা অনুবাদ করলে তা কাররামিয়াদের আকিদা হয়ে যায়। হানাফি ফকিহগণ এই শব্দকে চূড়ান্তভাবে পরিহার করেন। তারা কাররামিয়াদের এই আকিদাকে কুফরি আকিদা বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়াও এখানে বলা হলো, ‘আল্লাহর আকাশে থাকা’ আমরা বিশ্বাস করি; তবে এর স্বরূপ জানি না। স্বরূপ তো আমরা কত কিছুরই জানি না। আরশের স্বরূপ কী? জান্নাতের স্বরূপ কী? অদৃশ্যজগতের স্বরূপ না জানাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বরূপ প্রসঙ্গ বাদ দিয়েই তিন ধরনের আকিদা দেখে একজন পাঠক কী সবক নেবে? প্রথমে বলা হলো, (ক) আল্লাহ আসমানেও থাকেন না, জমিনেও থাকেন না; তিনি স্থান ও কালের গণ্ডি থেকে মুক্ত। (খ) এরপর বলা হলো, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। (গ) এখন বলা হলো, আল্লাহর আকাশে থাকা আমরা বিশ্বাস করি; তবে এর স্বরূপ জানি না। এই স্বরূপ না জানার কথা তো আগেরগুলোর সঙ্গেও লাগানো যায়। আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান, তবে এর স্বরূপ জানি না। আল্লাহ জমিনে বিরাজমান, তবে এর স্বরূপ জানি না। হিন্দুরা বলবে, আল্লাহ অবতারদের মধ্যে বিরাজমান, তবে এর স্বরূপ জানি না। হুলুলিরা বলবে, আল্লাহ ওলি-আউলিয়ার মধ্যে বিরাজমান, তবে এর স্বরূপ জানি না। কেউ বলবে, আল্লাহ মুমিনের কলবে বা কাবা শরিফের মধ্যে বিরাজমান, তবে এর স্বরূপ জানি না। আর এ সবগুলোকেই দলিল দ্বারা প্রমাণ করার কোশেশ করাও সম্ভব। আখের আল্লাহকে নিয়ে এভাবে স্ববিরোধী বক্তব্য প্রচারের ফল কী দাঁড়াবে? মানুষ বিভ্রমে পড়ে সংশয়গ্রস্ত হয়ে যাবে। আর নিঃসন্দেহে সংশয় হলো কুফর।