আলহামদু লিল্লাহ।.সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
শুরুতেই আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি- আমাদের প্রতি আস্থা রেখে এ প্রশ্নটি আমাদের নিকট পাঠানোর জন্য, আমাদের বিশ্বাসের প্রতি আপনার অনুরক্ততার জন্য এবং প্রশ্নটির উত্তর জানার ব্যাপারে আপনার আগ্রহের জন্য। এ ওয়েব সাইটের একজন অতিথি হিসেবে, পাঠক হিসেবে ও জ্ঞানপিপাসু হিসেবে আপনাকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। সুপ্রিয় পাঠক, আমরা আপনার চিঠিতে লক্ষ্য করেছি- আপনি যে, ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন সেটি আপনি খোলাখুলিভাবে ব্যক্ত করেছেন। এটি আমাদের জন্য ও আপনার জন্য শুভসংবাদ। আমাদের জন্য এ বিবেচনা থেকে খুশির সংবাদ যে, আমাদের ধর্ম আপনার মত সত্যান্বেষীদের কাছেও পৌঁছতে পেরেছে। আমাদের নবী তো আমাদেরকে জানিয়ে গিয়েছিলেন- এই ধর্ম ভূপৃষ্ঠের সর্বস্তরে পৌঁছে যাবে। তামিম আদ-দারি (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: রাত ও দিন যতদূর পৌঁছেছে এ ধর্মও ততদূর পৌঁছে যাবে। কোন পশমনির্মিত তাবু (শহুরে বাড়ী) অথবা মাটির ঘর (গ্রাম্য ঘর) কোনটাই বাদ থাকবে না; আল্লাহ তাআলা সর্বগৃহে এই ধর্মকে প্রবেশ করাবেন। সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে, অসম্মানীর ঘরে অসম্মানের সাথে। যে সম্মানের মাধ্যমে আল্লাহ ইসলামকে গৌরবময় করবেন এবং যে অপমানের মাধ্যমে আল্লাহ কুফরকে অপমানিত করবেন।[মুসনাদে আহমাদ (১৬৩৪৪), সিলসিলা সহিহা গ্রন্থে আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] এটি আপনার জন্য শুভকর এ দিক থেকে যে, এই ধর্মের প্রতি আপনার যে আগ্রহ এই আগ্রহ আপনাকে এই মহান ধর্ম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে অনুপ্রাণিত করবে। যেমন- এই ধর্ম মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ও সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যশীল। তাই আমরা আপনাকে পরামর্শ দিব আপনি সব ধরনের প্রভাব মুক্ত হয়ে ধীরস্থিরভাবে ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়ন করবেন। আপনি এই ওয়েব সাইটের (219) (21613) (20756) (10590) নং প্রশ্নোত্তরগুলো পড়তে পারেন। পক্ষান্তরে আপনার প্রশ্ন- “এই বিষয়টি বুঝা কঠিন যে, এক ব্যক্তি একটা কথা বলল, আর সে কথাটার কারণে তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হবে…।আমি বিশ্বাস করি, আমরা যেহেতু মানুষ তাই এ ধরনের কোন রায় প্রকাশ করার অধিকার আমাদের নেই।”আপনার কথা সঠিক- কুরআন-হাদিসের দলিল ছাড়া কারো বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার অধিকার কোন মানুষের নেই। যে কথার কারণে কারো বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয় সেটাকে মুসলিম স্কলারগণ ‘রিদ্দা’ (ইসলাম-ত্যাগ) হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কখন ব্যক্তির ‘রিদ্দা’ সাব্যস্ত হয়? এবং মুরতাদ (ইসলাম ত্যাগকারী) ব্যক্তির বিধান কী? এক: রিদ্দা মানে- ইসলাম গ্রহণ করার পর কুফরিতে ফিরে যাওয়া।
দুই: কখন ব্যক্তির ‘রিদ্দা’ সাব্যস্ত হয়?
যে বিষয়গুলোতে লিপ্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোন ব্যক্তির ‘রিদ্দা’ সাব্যস্ত হয়-তা চার প্রকার। ১. বিশ্বাসগতভাবে ইসলাম ত্যাগ করা। যেমন- আল্লাহর সাথে শিরক তথা অংশীদার স্থাপন করা, অথবা আল্লাহকে অস্বীকার করা অথবা আল্লাহ তাআলার সাব্যস্ত কোন গুণকে অস্বীকার করা।
২. কোন কথা উচ্চারণ করার মাধ্যমে ইসলাম ত্যাগ। যেমন- আল্লাহ তাআলাকে গালি দেয়া অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দেয়া।
৩. কর্মের মাধ্যমে ধর্মত্যাগ। যেমন-কোন নোংরা স্থানে কুরআন শরিফ নিক্ষেপ করা। এ কাজ আল্লাহর বাণীকে অবমূল্যায়নের নামান্তর। তাই এটি অন্তরে বিশ্বাস না থাকার আলামত। অনুরূপভাবে কোন প্রতিমাকে অথবা সূর্যকে অথবা চন্দ্রকে সিজদা করা।
৪. কোন কর্ম বর্জন করার মাধ্যমে ইসলাম ত্যাগ। যেমন- ইসলামের সকল অনুশাসনকে বর্জন করা এবং এর উপর আমল করা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।
তিন: মুরতাদের হুকুম কী?
যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।
মুরতাদকে হত্যা করার দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী “যে ব্যক্তি ধর্ম ত্যাগ করে তাকে হত্যা কর।” [সহিহ বুখারী (২৭৯৪)]। হাদিসে ধর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- “যে মুসলিম ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’ নিম্নোক্ত তিনটি কারণের কোন একটি ছাড়া তার রক্তপাত করা হারাম: হত্যার বদলে হত্যা, বিবাহিত ব্যভিচারী, দল থেকে বিচ্ছিন্ন-ধর্মত্যাগী।”[সহিহ বুখারি (৬৮৭৮) সহিহ মুসলিম (১৬৭৬)]। দেখুন: মাওসুআ ফিকহিয়্যা (ফিকহি বিশ্বকোষ), খণ্ড-২২, পৃষ্ঠা- ১৮০ প্রিয় প্রশ্নকারী, এর মাধ্যমে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মুরতাদকে হত্যা করার বিষয়টি আল্লাহর আদেশেই সংঘটিত হয়ে থাকে। যেহেতু আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। “তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদের আনুগত্য কর” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুরতাদকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে- “যে ব্যক্তি তার ধর্ম পরিবর্তন করেছে তাকে হত্যা কর।” এ মাসয়ালার প্রতি সন্তুষ্ট হতে আপনার হয়তো কিছু সময় লাগতে পারে, কিছু চিন্তাভাবনার প্রয়োজন হতে পারে। আপনি এ দিকটি একটু ভেবে দেখেন তো, একজন মানুষ সত্যকে অনুসরণ করল, সত্যপথে প্রবেশ করল এবং আল্লাহ তার উপর যে ধর্ম গ্রহণ করা আবশ্যক (ফরয) করে দিয়েছেন একমাত্র সে সত্য ধর্ম গ্রহণ করল। এরপর আমরা তাকে এই অবকাশ দিব যে, সে যখন ইচ্ছা অতি সহজে এই ধর্ম ত্যাগ করে চলে যাবে এবং কুফরি কথা উচ্চারণ করবে -যে কথা ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বহিষ্কার করে দেয়- এভাবে সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর কিতাব, তাঁর ধর্মকে অস্বীকার করবে কিন্তু কোন শাস্তির সম্মুখীন হবে না। এই যদি হয় তাহলে তার নিজের উপর এবং অন্য যারা এই ধর্মে প্রবেশ করতে চায় তাদের উপর এর প্রভাব কেমন হবে? আপনার কি মনে হয় না, এ রকম সুযোগ দিলে এই মহান ধর্ম -যা গ্রহণ করা অনিবার্য- একটি উন্মুক্ত দোকানে পরিণত হবে। যে যখন ইচ্ছা এতে প্রবেশ করবে এবং যখন ইচ্ছা বের হয়ে যাবে। হতে পারে সে অন্যকেও ইসলাম ত্যাগে অনুপ্রাণিত করবে। তাছাড়া এই ব্যক্তি তো এমন কেউ নয় যে সত্যকে জানেনি, ধর্মকর্ম, ইবাদত-বন্দেগি কিছুই করেনি। বরঞ্চ এই ব্যক্তি সত্যকে জেনেছে, ধর্মকর্ম করেছে, ইবাদত-অনুষ্ঠান আদায় করেছে। সুতরাং সে যতটুকু শাস্তি প্রাপ্য এটি তার চেয়ে বেশি নয়। এ ধরনের শাস্তি শুধু এমন এক ব্যক্তির জন্য রাখা হয়েছে যে ব্যক্তির জীবনের কোন মূল্য নেই। কারণ সে ব্যক্তি সত্যকে জেনেছে, ইসলামের অনুসরণ করেছে এরপর তা ছেড়ে দিয়েছে। অতএব এ ব্যক্তির আত্মার চেয়ে মন্দ কোন আত্মা আছে কি? সারকথা হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা এই ধর্ম নাযিল করেছেন এবং তিনি এই ধর্ম গ্রহণ করা অপরিহার্য করেছেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর ইসলাম ত্যাগকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন। এই শাস্তি মুসলমানদের চিন্তাপ্রসূত নয়, পরামর্শভিত্তিক নয়, ইজতিহাদনির্ভর নয়। বিষয়টি যেহেতু এমনু তাই আমরা যাঁকে রব্ব হিসেবে, ইলাহ হিসেবে মেনে নিয়েছি তাঁর হুকুমের অনুসরণ করতেই হবে। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে তাঁর পছন্দীয় ও সন্তোষজনক আমল করার তাওফিক দিন। আমরা পুনরায় আপনার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
যে ব্যক্তি হেদায়েত গ্রহণ করেছে তাঁর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।